ভিডিও

মৌসুমজুড়ে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক প্রভাবে কমেছে সবজির উৎপাদন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১০:৫২ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১০:৫২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

শাওন রহমান : অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, ঘন কুয়াশাসহ আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে এবার রবি মৌসুমে কমেছে সবজির উৎপাদন, যার প্রভাব পড়েছে বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। চলতি বছর সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম ছিল অন্য যেকোন বছরের তুলনায় বেশি।

আগে শীতকালে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজির দাম না পেয়ে মাঠেই ফেলে রাখতেন। আবার হাট-বাজারের রাস্তায় ধারেও অনেক সবজি পড়ে থাকতে দেখা যেত। তবে চলতি রবি মৌসুমে (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত) এর উল্টো চিত্রই দেখা যাচ্ছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গত বছরের অক্টোবরে টানা বৃষ্টি, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে শীত ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। আবার জানুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশার কারণে টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় সূর্যের আলো দেখা যায়নি।

মূলত প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনোর প্রভাবে আবহাওয়া এমন অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। এতে শীতকালীন সবজি ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে কৃষক সমস্যার মুখে পড়েছেন। এ অঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দীর্ঘ সময় বিরূপ আবহাওয়া থাকায় সবজি চাষে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে আলুর ফলন কম এবং শীতকালীন শাক-সবজি চাষে দেরি হয়েছে।

বগুড়া সদরের শ্যামবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আফসার আলী বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই নিজের ৩৪ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করছি। অন্যান্য বছর যে পরিমাণ ফলন পাই এবার তা পাইনি, অথচ এবার খরচও বেশি পড়েছে। এ অবস্থা শুধু আমার নয়, এই এলাকার বেশিরভাগ কৃষকরা আবহাওয়ার কারণে তাদের কাঙ্খিত ফলন পাচ্ছেন না।

কৃষক এরশাদ আলী বলেন, এবারের আবহাওয়া ঠিক ছিল না। এ কারণে বিভিন্ন ধরনের সবজির উৎপাদন কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদন কম হলেও সবজির দাম ভালো হওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হননি। চকমিঠুন এলাকার কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, দেড় বিঘা জমির টমেটো গাছে ঘন কুয়াশার কারণে ফলন দেরিতে এসেছে।

এছাড়া আলুর ফলন কম। আরও শীতকালীন সবজি লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও মরিচ গাছেও প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। মূলত আবহাওয়া কারণেই এমন হচ্ছে বলে মনে করছি আমরা।  বগুড়ার স্থানীয় বাজারগুলোতে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতিকেজি আলু ৪০-৫০, বেগুন ৭০-৮০, কাঁচামরিচ ৬০-৮০, পেঁয়াজ ৮০-১০০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০-৪০, টমেটো ৪০-৫০, করলা ৬০-৮০ টাকায় বেচাকেনা হতে দেখা যায়।

বর্তমানে প্রতিকেজি আলু ৩০-৩৫, বেগুন ৫০-৬০, কাঁচামরিচ ৬০-৭০, পেঁয়াজ ৯৫-১১০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০-৩০, টমেটো ৩০-৪০, করলা ৬০-৮০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।

বগুড়ার রাজা বাজারের সবজি বিক্রেতা রতন মিয়া বলছেন, বিগত যে কোন বছরের তুলনায় এবার বগুড়ার বৃহত্তম মহাস্থান বাজারসহ আশেপাশের হাট-বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ ছিল কম। মূলত শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে কৃষকরা জমি থেকে তাদের কাঙ্খিত ফলন তুলতে পারেননি। আর কম সরবরাহের কারণে এবার ভরা মৌসুমেও সবজির দাম চড়া। তবে বর্তমানে আস্তে আস্তে শীতকালীন সবজির দাম কমে আসছে। তবে পেঁয়াজের দাম ঊর্দ্ধমুখি।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় এবার ১৩ হাজার ৮৭ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়। এই পরিমাণ জমিতে ৩ লাখ সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিকটন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এরমধ্যে আলু চাষ হয় ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর, বেগুন এক হাজার ৬১০, ফুলকপি এক হাজার ৩৫০, ছিম ৭৩৫ হেক্টর, পেঁয়াজ ৩ হাজার ২৩৫ এবং কাঁচামরিচ চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে। গত বছর বগুড়ায় হেক্টর প্রতি ২৩ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদন হলেও এবার এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে সাড়ে ২২ মেট্রিকটন।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি পরিচালক ফরিদুর রহমান বলছেন, এ বছর বগুড়ায় শীত ছিল বেশি। ঘন কুয়াশার কারণেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এ কারণে অনেক সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসই আবহাওয়া খুব বিরূপ আচরণ করেছে।

গত বছর বগুড়ায় হেক্টর প্রতি ২৩ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদন হলেও এবার এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে সাড়ে ২২ মেট্রিকটন। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণের কারণেও এমনটা হতে পারে। তবে বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS